Monday, 4 May 2015

বাংলাদেশের উচু সতটি পাহাড়ের উচ্চতা, অবস্হান আর যাবার পথ :


১। মদক তং বা সাকাহা ফং : 
 

উচ্চতা: প্রথম বাংলাদেশী অভিযাত্রী দল ( ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে ) এর উচ্চতা পান ১০৫৫ মিটার বা ৩৪৬০ ফুট । নেচার এডভেঙ্চার ক্লাব পেয়েছিল ৩৪৮০ ফুট । ভ্রমণ বাংলাদেশ - এডভেঞ্চারবিডি জরিপে আসে ১০৫০ মিটার বা ৩৪৪৫ ফুট। ইউ এস ম্যাপে আছে ৩৪৫১ফুট । গুগুল ম্যাপ দেখায় ১০৪০ মিটার( ৩৪১১ ফুট)এর বেশী । গুগুল আর্থ এ ৩৪১৪ ফুট । 

অবস্হান: 21°47′11″N 92°36′36″E ( উইকি ) 

কিভাবে যাবেন : তিন দিক থেকে যাওয়া যায় : থানচি, রুমা বাজার ও রেমাক্রি বাজার দিয়ে । 

রুমা থেকে রুট : 

১। বগা লেক - কেওক্রাডং - থাইক্যাং পাড়া - ( নতুন বোম পাড়া হয়ে ) দুলাচরণ পাড়া - হান্জরাই পাড়া - নিফিউ পাড়া - সামিট । 

প্রথম দিকের দলগুলো অবশ্য দুলাচরণ পাড়া থেকে শালুকিয়া পাড়া উঠে যেতো, এর পর নেফি্উ হয়ে সামিট। এখন আর শলুকিয়া খুব একটা যাওয়া হয় না । 

২। বগা লেক - কেও - থাইক্যাং পাড়া না ঢুকে কবরস্হান থেকে ডানে মোড় নিয়ে তাম্ল পাড়ার নীচ দিয়ে রেমাক্রি খাল - নতুন বোম পাড়া -খাল ধরে দুলাচরণ পাড়া - এরপর নেফি্উ পাড়া - সামিট । 

৩। বর্ষাকালে খাল ধরে যাওয়া কঠিন বলে অনেক সময় থাইক্যাং পাড়া- তাম্ল পাড়া - হয়ে হান্জরাই পাড়া - নেফিউ - সামিট। ( তবে তাম্ল বা নতুন তাম্ল দিয়ে পথ অনেকটা ঘুর পথ, উঠা নামাও বেশী ) 

৪। বগা লেক - কেও - বাকলাই - সিম্পাম্পি - ( তাজিংডং সামিট বাড়তি) তারপর রেমাক্রি খাল নেমে হান্জরাই - নেফিউ - সামিট। 
( ঘুরপথ, পানির সমস্যা আছে, তবে তাজিং ডং বোনাস ) 

থানচি থেকে রুট : 

১। থানচি - বোর্ডিং পাড়া - শেরকর পাড়া - তাজিংডং - সিম্পাম্পি পাড়া -হান্জরাই পাড়া - নেফিউ পাড়া - সামিট। 

শেরকর পাড়া থেকে তাজিং ডং না গিয়ে দো তং পাড়া হয়ে সাজাই পাড়া দিয়েও যাওয়া যাবে, তবে শেরকর থেকে দোতং পাড়া ট্রেইল নেই জংগল আর ঝোপ-ঝার কেটে যেতে হবে । 

( উঠা নামা বেশী, পানি ছায়া কম ) 

২। থানচি - বোর্ডিং পাড়া - জিরি পথে কাইতং পাড়া -জিরি ধরে আগানো - সিম্পাম্পি পাড়া উঠা -হান্জরাই পাড়া - নেফিউ পাড়া - সামিট। 

রেমাক্রি থেকে রুট : 

১। নাফা খুম - দুলা পাড়া - সাজাই পাড়া - নেফিউ পাড়া সামিট । 
২। নাফা খুম - জিন্না পাড়া - অমিয়াখুম - সাতভাই খুম হয়ে হান্জরাই পাড়া - সামিট 
৩ । নাফা খুম - জিন্না পাড়া - অমিয়াখুম - হয়ে সাজাই পাড়া - সামিট 

রুট ২ ও ৩ এ জিন্নাহ পাড়া বাদ দিয়ে থুইসা পাড়া অতিরাম পাড়া হয়েও যাওয়া যাবে । বর্তমানে এদিক দিয়েই বেশী জনপ্রিয় । 

২। জ-ত্লং বা মদক মুয়াল : 

উচ্চতা: প্রথম অভিযাত্রী সুব্রত দাস নিতিশ আর বিজয় সংকর এর উচ্চতা মাপেন নি । দ্বিতীয় দল ( মুগ্ধ - সুজন ) পেয়েছিল ৩৩৫১ ফুট । ভ্রমণ বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩৩১৮ ফুট । ডি-ওয়ে জরিপে পাওয়া যায় ৩৩৩৩ ফুট । 

অবস্হান : 21°40’23.78″N & 92°36’16.01″E ( উইকি) 

যাবার পথ : বান্দরবান থেকে বাসে বা জীপে থানচি , থানচি থেকে নৌকায় রেমাক্রি বাজার , সেখান থেকে ৩ ঘন্টার পায়ে হাটা পথ দলিয়ান পাড়া । দলিয়ান পাড়া থেকে এক দিনেই পাহাড়ে উঠে ফিরে আসা যায় । 

৩। দুমলং : 
 

উচ্চতা : প্রথম অভিযাত্রী দল নেচার এডভেঞ্চার ক্লাব উচ্চতা পরিমাপ করে ৩৩১২ ফুট, বিডি এক্সপ্লোরার পায় ৩৩১৮ ফুট , ভ্রমণ বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩৩১৫ ফুট । 

অবস্হান : 22°02′02.1″N 92°35′36.3″E 

কিভাবে যাবেন : বান্দরবান থেকে রুমা বাজার বগা লেক হয়ে পুকুর পাড়া / প্রাংজং পাড়া । সেখান থেকে একদিনেই দুমলং উঠে ফিরে আসা যায় । 

৪। যোগী হাফং বা কন্দুক : 
 
উচ্চতা : প্রথম অভিযাত্রী দল ( মুগ্ধ - সুজন ) পেয়েছিল ৩২৫২ ফুট । ভ্রমণ বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩২২২ ফুট । 

অবস্হান : 21°42’13.0″N 92°36’5.38″E ( বাংলাট্রেক ) 

কিভাবে যাবেন : বান্দরবান থেকে বাসে বা জীপে থানচি , থানচি থেকে নৌকায় রেমাক্রি বাজার , সেখান থেকে ৩ ঘন্টার পায়ে হাটা পথ দলিয়ান পাড়া । দলিয়ান পাড়া থেকে এক দিনেই পাহাড়ে উঠে ফিরে আসা যায় । 

৫। কেওক্রাডং :  

উচ্চতা : আর্মি কতৃক স্হাপিত ফলকে আছে ৩১৭২ ফুট । ভ্রমণ বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩২৮ ফুট । অন্যান্য ট্রেকিং দল ৩২০০-৩২৬০ ফুট। 

অবস্হান : 21°57′00″N 92°30′53″E. 

কিভাবে যাবেন : পথ অত্যন্ত গোপনীয় , পোষ্টে উল্লেখ করা যাবেনা !( বিশেষ দরকার হলে মন্তবে জিগাইয়েন ) 

৬ । মাইথাইজমা :  

উচ্চতা : প্রথম অভিযাত্রী বিডি এক্সপ্লোরার ৩১৭৪ ফুট । ভ্রমণ বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩১৭৯ ফুট । 

অবস্হান : 22°0’43.97″N 92°35’51.14″E 

কিভাবে যাবেন : বান্দরবান থেকে রুমা বাজার বগা লেক হয়ে পুকুর পাড়া / প্রাংজং পাড়া । সেখান থেকে একদিনেই পাহাড়ে উঠে ফিরে আসা যায় । 

৭ । থিনদলতে : 
 

উচ্চতা : 
নেচার এডভেঞ্চার আর নর্থ আলপাইন এখানে অভিযান চালিয়েছিল সবার আগে, সে অভিযানের বিস্তারিত ফলাফল জানা যায় নি । এর পর বিডি এক্সপ্লোরার এটাকে ৩১৪৯ ফুট পায় ,ভ্রমণ  বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩১৩৯ ফুট । 

অবস্হান : N 21°54.611', E 092°35.380′ 

কিভাবে যাবেন : রুমা বাজার - বগালেক - কেওক্রাডং হয়ে থিনদলতে পাড়া । সেখান থেকে ঘন্টাখানেকের পথ ! 

ভাল থাকুন , ঘুরে আসুন সাতটি পাহাড় , মজা পাবেন !!!!!!!

বাংলাদেশের সবচেয়ে কষ্টসাধ্য চুড়া জ-ত্লং অভিযানের ইতিহাস ।


 

কথা হচ্ছিল নিতীশ দা'র সাথে, বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ চুড়া আরোহনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন আগ্রহ ভরে। নিতিশ ডা আর ডাক্তার বিজয়-ই অভিযাত্রী হিসেবে বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ চুড়া প্রথম আরোহণ করেন । উচ্চতায় ২য় হলেও দেশের ট্রেকিং কমুনিটিতে এটি সবচেয়ে কষ্টসাধ্য চুড়া হিসেবে বিবেচিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে নিতিশদা'রা এটাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া মনে করে-ই উঠেছিল । নিতীশ দা'র কথা মত সেটা ২০০৫ এর ঘটনা । প্রসংগত একটা কথা বলে রাখি সেযুগে ইন্টারনেট আর গুগুল আর্থ-গুগুল ম্যাপের এতটা প্রসার ঘটেনি। ঘরে বসে আজকালের মত নাসার এসআরটিএম (SRTM : Shuttle Radar Topography Mission ) ডেটা , রাশান টপো ম্যাপ, ইউ এস টপো ম্যাপ এসব পাওয়ার ব্যবস্হা ছিল না । সে সময় বিভিন্ন ম্যাপ পত্র ঘেটে নিতিশ দা খুজে পেলেন মদক মুয়াল নামের একটা চুড়া , যেটা মায়ানমার সীমান্তে অবস্হিত ।

বান্দরবনে ট্রেকিং এ অভিজ্ঞ নিতীশদা । এরপরও যে কারো জন্যই লোকেশনটা স্পেসিফিক ভাবে পয়েন্ট করা, ট্রেকিং রুট ফাইনাল করা - সাপ্লাই আর লোকাল গাইডের জন্য কাছাকাছি গ্রাম বা লোকাকয়ের অবস্হান জানা বা কমপক্ষে 'পাড়া'র নামটা জানা - এগুলো একটা বড় চ্যালেঞ্জ । এসকল বিষয়েই আরো বিস্তারিত জানার জন্য সাধ্যমত খোজ খবর চালালেন নিতিশ দা । একজন আর্মির স হায়তা পেয়েছিলেন তিনি এ বিষয়ে । অথচ জ-ত্লং বা মদক মুয়াল মিশণে - এই আর্মি-ই সবচেয়ে প্যারা দিয়েছিল ওনাদের টিম কে । 

যাই হোক জ-ত্লং এর মুখস্ত রুট এখন দলিয়ান পাড়া দিয়েই প্রতিষ্ঠিত । দলিয়ান পাড়ায় পৌছানোর পর আর্মি জেরা, অস হযোগিটা আর হুমকি ধামকির মুখে পড়েন ওনারা । প্রত্যন্ত পার্বত্য এলাকায় আর্মি - বিডিআর এর কাছ থেকে এ জাতীয় আচরণ পেয়ে পুরাণো ট্রেকাররা অনেকটাই অভ্যস্ত । যাই হোক আর্মি ওনাদের আগে বাড়তে দিতে চায়নি , আর ওনারাও নিজেদের মিশনে অনড় ছিলেন । শেষ পর্যন্ত লালরিং কার্বারী ওনাদের সাহায্য করেছিল জ-ত্লং অভিযানে । 

নিতিশ দা আর ডা: বিজয়ের অভিযানের কাহিনী এই লালরিং এর কাছে থেকেই আমি নিজে শুনেছি দলিয়ান পাড়ায় । সুতরাং সাক্ষ্য প্রমাণের মাপকাঠিতেও ওনাদের অভিযানের ঘটনা উৎরে যায়, কারো আপত্তি করার কিছু নেই । ম্যাপে মদক মুয়াল লেখা হলেও এই পাহাড় চুড়ার কাছাকাছি থেকে জ-ত্লং নামে একটা ঝিরি নেমে এসেছে , স্হানীয়রা এই ঝিরির নামে এটাকে জ-ত্লং নামেই ডাকে । 

যাই হোক নিতীশ দার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ২০০৫ আর ২০০৮ মোট দুইবার জ-ত্লং গিয়েছিলেন ওনারা। ২০০৬-৭ এর দিকে নেচার এডভেঞ্চার ক্লাব থানচি দিয়ে সাকা যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তখন নিতিশ দার সাথে পরিচয় হয় নেচার এডভেঞ্চারের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের সাথে । সাজ্জাডের কাছ থেকেই প্রথম ' জ-ত্লং' চুড়ার নামটা জানতে পারি । ( গুগুলে ভৌগলিক ভাবে উচু যায়গাটা সম্পর্কে জানতাম , তবে নাম জানা ছিল না ) তবে তার চেয়ে বড় বিষয় ছিল আমার কাছে নিতিশ দা'র মত একজন অভিজ্ঞ ট্রেকার সম্পর্কে জানতে পারা । যাই হোক জ-ত্লং আর নিতিশ দা সম্পর্কে ট্রেকিং কমুনিটির অনেকেই জানতে পেরেছে সাজ্জাদের মাধ্যমেই । ( ফেসবুকে শেয়ারিং এর যুগ তখনও শুরু হয় নি ) একেক টা অভিযান আর অভিযাত্রী সম্পর্কে জানতে হলে সে যুগে অনেক অনেক কাঠ খড় পুড়াতে হত ! 

ডি-ওয়ের ফ্লাই ওভার দা পিক : বাংলাদেশের অনেক অনেক মৌলিক এক্সপ্লোরের স্হপতি ' ডি-ওয়ে ' ফ্লাই ওভার দা পিক প্রযেক্ট হাতে নেয় ২০১১ তে । চকোরিয়া থেকে বান্দরবেনে ঢুকে মিরন্চা রেঞ্জ পার হয়ে লামা - আলি কদম হয়ে চিম্বুক রেঞ্জের সবচেয়ে উচু চুড়া ক্রিসতং সামিট করা ছিল প্রজেক্টের প্রথম ফেজ । কিন্তু প্রজেক্ট - এর মুল আকর্ষণ ছিল বান্দর বনের রেন্জ গুলো একে একে ক্রস করে একেবারে মায়ানমার সীমন্ত পর্যন্ত গিয়ে দেশের সবচেয়ে দুরূহ চুড়াটা সামিট করা । ক্রিসতং সামিটের পর তাই ডি-ওয়ে টিম পূব দিকে নেমে যায় সাংগু নদীর দিকে। সেখান থেকে ট্রেক করে এগিয়ে যায় দলিয়ানের দিকে ....

( আগামী পর্বে সমাপ্ত )