Monday 4 May 2015

বাংলাদেশের উচু সতটি পাহাড়ের উচ্চতা, অবস্হান আর যাবার পথ :


১। মদক তং বা সাকাহা ফং : 
 

উচ্চতা: প্রথম বাংলাদেশী অভিযাত্রী দল ( ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে ) এর উচ্চতা পান ১০৫৫ মিটার বা ৩৪৬০ ফুট । নেচার এডভেঙ্চার ক্লাব পেয়েছিল ৩৪৮০ ফুট । ভ্রমণ বাংলাদেশ - এডভেঞ্চারবিডি জরিপে আসে ১০৫০ মিটার বা ৩৪৪৫ ফুট। ইউ এস ম্যাপে আছে ৩৪৫১ফুট । গুগুল ম্যাপ দেখায় ১০৪০ মিটার( ৩৪১১ ফুট)এর বেশী । গুগুল আর্থ এ ৩৪১৪ ফুট । 

অবস্হান: 21°47′11″N 92°36′36″E ( উইকি ) 

কিভাবে যাবেন : তিন দিক থেকে যাওয়া যায় : থানচি, রুমা বাজার ও রেমাক্রি বাজার দিয়ে । 

রুমা থেকে রুট : 

১। বগা লেক - কেওক্রাডং - থাইক্যাং পাড়া - ( নতুন বোম পাড়া হয়ে ) দুলাচরণ পাড়া - হান্জরাই পাড়া - নিফিউ পাড়া - সামিট । 

প্রথম দিকের দলগুলো অবশ্য দুলাচরণ পাড়া থেকে শালুকিয়া পাড়া উঠে যেতো, এর পর নেফি্উ হয়ে সামিট। এখন আর শলুকিয়া খুব একটা যাওয়া হয় না । 

২। বগা লেক - কেও - থাইক্যাং পাড়া না ঢুকে কবরস্হান থেকে ডানে মোড় নিয়ে তাম্ল পাড়ার নীচ দিয়ে রেমাক্রি খাল - নতুন বোম পাড়া -খাল ধরে দুলাচরণ পাড়া - এরপর নেফি্উ পাড়া - সামিট । 

৩। বর্ষাকালে খাল ধরে যাওয়া কঠিন বলে অনেক সময় থাইক্যাং পাড়া- তাম্ল পাড়া - হয়ে হান্জরাই পাড়া - নেফিউ - সামিট। ( তবে তাম্ল বা নতুন তাম্ল দিয়ে পথ অনেকটা ঘুর পথ, উঠা নামাও বেশী ) 

৪। বগা লেক - কেও - বাকলাই - সিম্পাম্পি - ( তাজিংডং সামিট বাড়তি) তারপর রেমাক্রি খাল নেমে হান্জরাই - নেফিউ - সামিট। 
( ঘুরপথ, পানির সমস্যা আছে, তবে তাজিং ডং বোনাস ) 

থানচি থেকে রুট : 

১। থানচি - বোর্ডিং পাড়া - শেরকর পাড়া - তাজিংডং - সিম্পাম্পি পাড়া -হান্জরাই পাড়া - নেফিউ পাড়া - সামিট। 

শেরকর পাড়া থেকে তাজিং ডং না গিয়ে দো তং পাড়া হয়ে সাজাই পাড়া দিয়েও যাওয়া যাবে, তবে শেরকর থেকে দোতং পাড়া ট্রেইল নেই জংগল আর ঝোপ-ঝার কেটে যেতে হবে । 

( উঠা নামা বেশী, পানি ছায়া কম ) 

২। থানচি - বোর্ডিং পাড়া - জিরি পথে কাইতং পাড়া -জিরি ধরে আগানো - সিম্পাম্পি পাড়া উঠা -হান্জরাই পাড়া - নেফিউ পাড়া - সামিট। 

রেমাক্রি থেকে রুট : 

১। নাফা খুম - দুলা পাড়া - সাজাই পাড়া - নেফিউ পাড়া সামিট । 
২। নাফা খুম - জিন্না পাড়া - অমিয়াখুম - সাতভাই খুম হয়ে হান্জরাই পাড়া - সামিট 
৩ । নাফা খুম - জিন্না পাড়া - অমিয়াখুম - হয়ে সাজাই পাড়া - সামিট 

রুট ২ ও ৩ এ জিন্নাহ পাড়া বাদ দিয়ে থুইসা পাড়া অতিরাম পাড়া হয়েও যাওয়া যাবে । বর্তমানে এদিক দিয়েই বেশী জনপ্রিয় । 

২। জ-ত্লং বা মদক মুয়াল : 

উচ্চতা: প্রথম অভিযাত্রী সুব্রত দাস নিতিশ আর বিজয় সংকর এর উচ্চতা মাপেন নি । দ্বিতীয় দল ( মুগ্ধ - সুজন ) পেয়েছিল ৩৩৫১ ফুট । ভ্রমণ বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩৩১৮ ফুট । ডি-ওয়ে জরিপে পাওয়া যায় ৩৩৩৩ ফুট । 

অবস্হান : 21°40’23.78″N & 92°36’16.01″E ( উইকি) 

যাবার পথ : বান্দরবান থেকে বাসে বা জীপে থানচি , থানচি থেকে নৌকায় রেমাক্রি বাজার , সেখান থেকে ৩ ঘন্টার পায়ে হাটা পথ দলিয়ান পাড়া । দলিয়ান পাড়া থেকে এক দিনেই পাহাড়ে উঠে ফিরে আসা যায় । 

৩। দুমলং : 
 

উচ্চতা : প্রথম অভিযাত্রী দল নেচার এডভেঞ্চার ক্লাব উচ্চতা পরিমাপ করে ৩৩১২ ফুট, বিডি এক্সপ্লোরার পায় ৩৩১৮ ফুট , ভ্রমণ বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩৩১৫ ফুট । 

অবস্হান : 22°02′02.1″N 92°35′36.3″E 

কিভাবে যাবেন : বান্দরবান থেকে রুমা বাজার বগা লেক হয়ে পুকুর পাড়া / প্রাংজং পাড়া । সেখান থেকে একদিনেই দুমলং উঠে ফিরে আসা যায় । 

৪। যোগী হাফং বা কন্দুক : 
 
উচ্চতা : প্রথম অভিযাত্রী দল ( মুগ্ধ - সুজন ) পেয়েছিল ৩২৫২ ফুট । ভ্রমণ বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩২২২ ফুট । 

অবস্হান : 21°42’13.0″N 92°36’5.38″E ( বাংলাট্রেক ) 

কিভাবে যাবেন : বান্দরবান থেকে বাসে বা জীপে থানচি , থানচি থেকে নৌকায় রেমাক্রি বাজার , সেখান থেকে ৩ ঘন্টার পায়ে হাটা পথ দলিয়ান পাড়া । দলিয়ান পাড়া থেকে এক দিনেই পাহাড়ে উঠে ফিরে আসা যায় । 

৫। কেওক্রাডং :  

উচ্চতা : আর্মি কতৃক স্হাপিত ফলকে আছে ৩১৭২ ফুট । ভ্রমণ বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩২৮ ফুট । অন্যান্য ট্রেকিং দল ৩২০০-৩২৬০ ফুট। 

অবস্হান : 21°57′00″N 92°30′53″E. 

কিভাবে যাবেন : পথ অত্যন্ত গোপনীয় , পোষ্টে উল্লেখ করা যাবেনা !( বিশেষ দরকার হলে মন্তবে জিগাইয়েন ) 

৬ । মাইথাইজমা :  

উচ্চতা : প্রথম অভিযাত্রী বিডি এক্সপ্লোরার ৩১৭৪ ফুট । ভ্রমণ বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩১৭৯ ফুট । 

অবস্হান : 22°0’43.97″N 92°35’51.14″E 

কিভাবে যাবেন : বান্দরবান থেকে রুমা বাজার বগা লেক হয়ে পুকুর পাড়া / প্রাংজং পাড়া । সেখান থেকে একদিনেই পাহাড়ে উঠে ফিরে আসা যায় । 

৭ । থিনদলতে : 
 

উচ্চতা : 
নেচার এডভেঞ্চার আর নর্থ আলপাইন এখানে অভিযান চালিয়েছিল সবার আগে, সে অভিযানের বিস্তারিত ফলাফল জানা যায় নি । এর পর বিডি এক্সপ্লোরার এটাকে ৩১৪৯ ফুট পায় ,ভ্রমণ  বাংলাদেশ-এডভেঞ্চারবিডি জরিপে পাওয়া যায় ৩১৩৯ ফুট । 

অবস্হান : N 21°54.611', E 092°35.380′ 

কিভাবে যাবেন : রুমা বাজার - বগালেক - কেওক্রাডং হয়ে থিনদলতে পাড়া । সেখান থেকে ঘন্টাখানেকের পথ ! 

ভাল থাকুন , ঘুরে আসুন সাতটি পাহাড় , মজা পাবেন !!!!!!!

বাংলাদেশের সবচেয়ে কষ্টসাধ্য চুড়া জ-ত্লং অভিযানের ইতিহাস ।


 

কথা হচ্ছিল নিতীশ দা'র সাথে, বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ চুড়া আরোহনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন আগ্রহ ভরে। নিতিশ ডা আর ডাক্তার বিজয়-ই অভিযাত্রী হিসেবে বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ চুড়া প্রথম আরোহণ করেন । উচ্চতায় ২য় হলেও দেশের ট্রেকিং কমুনিটিতে এটি সবচেয়ে কষ্টসাধ্য চুড়া হিসেবে বিবেচিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে নিতিশদা'রা এটাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া মনে করে-ই উঠেছিল । নিতীশ দা'র কথা মত সেটা ২০০৫ এর ঘটনা । প্রসংগত একটা কথা বলে রাখি সেযুগে ইন্টারনেট আর গুগুল আর্থ-গুগুল ম্যাপের এতটা প্রসার ঘটেনি। ঘরে বসে আজকালের মত নাসার এসআরটিএম (SRTM : Shuttle Radar Topography Mission ) ডেটা , রাশান টপো ম্যাপ, ইউ এস টপো ম্যাপ এসব পাওয়ার ব্যবস্হা ছিল না । সে সময় বিভিন্ন ম্যাপ পত্র ঘেটে নিতিশ দা খুজে পেলেন মদক মুয়াল নামের একটা চুড়া , যেটা মায়ানমার সীমান্তে অবস্হিত ।

বান্দরবনে ট্রেকিং এ অভিজ্ঞ নিতীশদা । এরপরও যে কারো জন্যই লোকেশনটা স্পেসিফিক ভাবে পয়েন্ট করা, ট্রেকিং রুট ফাইনাল করা - সাপ্লাই আর লোকাল গাইডের জন্য কাছাকাছি গ্রাম বা লোকাকয়ের অবস্হান জানা বা কমপক্ষে 'পাড়া'র নামটা জানা - এগুলো একটা বড় চ্যালেঞ্জ । এসকল বিষয়েই আরো বিস্তারিত জানার জন্য সাধ্যমত খোজ খবর চালালেন নিতিশ দা । একজন আর্মির স হায়তা পেয়েছিলেন তিনি এ বিষয়ে । অথচ জ-ত্লং বা মদক মুয়াল মিশণে - এই আর্মি-ই সবচেয়ে প্যারা দিয়েছিল ওনাদের টিম কে । 

যাই হোক জ-ত্লং এর মুখস্ত রুট এখন দলিয়ান পাড়া দিয়েই প্রতিষ্ঠিত । দলিয়ান পাড়ায় পৌছানোর পর আর্মি জেরা, অস হযোগিটা আর হুমকি ধামকির মুখে পড়েন ওনারা । প্রত্যন্ত পার্বত্য এলাকায় আর্মি - বিডিআর এর কাছ থেকে এ জাতীয় আচরণ পেয়ে পুরাণো ট্রেকাররা অনেকটাই অভ্যস্ত । যাই হোক আর্মি ওনাদের আগে বাড়তে দিতে চায়নি , আর ওনারাও নিজেদের মিশনে অনড় ছিলেন । শেষ পর্যন্ত লালরিং কার্বারী ওনাদের সাহায্য করেছিল জ-ত্লং অভিযানে । 

নিতিশ দা আর ডা: বিজয়ের অভিযানের কাহিনী এই লালরিং এর কাছে থেকেই আমি নিজে শুনেছি দলিয়ান পাড়ায় । সুতরাং সাক্ষ্য প্রমাণের মাপকাঠিতেও ওনাদের অভিযানের ঘটনা উৎরে যায়, কারো আপত্তি করার কিছু নেই । ম্যাপে মদক মুয়াল লেখা হলেও এই পাহাড় চুড়ার কাছাকাছি থেকে জ-ত্লং নামে একটা ঝিরি নেমে এসেছে , স্হানীয়রা এই ঝিরির নামে এটাকে জ-ত্লং নামেই ডাকে । 

যাই হোক নিতীশ দার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ২০০৫ আর ২০০৮ মোট দুইবার জ-ত্লং গিয়েছিলেন ওনারা। ২০০৬-৭ এর দিকে নেচার এডভেঞ্চার ক্লাব থানচি দিয়ে সাকা যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তখন নিতিশ দার সাথে পরিচয় হয় নেচার এডভেঞ্চারের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের সাথে । সাজ্জাডের কাছ থেকেই প্রথম ' জ-ত্লং' চুড়ার নামটা জানতে পারি । ( গুগুলে ভৌগলিক ভাবে উচু যায়গাটা সম্পর্কে জানতাম , তবে নাম জানা ছিল না ) তবে তার চেয়ে বড় বিষয় ছিল আমার কাছে নিতিশ দা'র মত একজন অভিজ্ঞ ট্রেকার সম্পর্কে জানতে পারা । যাই হোক জ-ত্লং আর নিতিশ দা সম্পর্কে ট্রেকিং কমুনিটির অনেকেই জানতে পেরেছে সাজ্জাদের মাধ্যমেই । ( ফেসবুকে শেয়ারিং এর যুগ তখনও শুরু হয় নি ) একেক টা অভিযান আর অভিযাত্রী সম্পর্কে জানতে হলে সে যুগে অনেক অনেক কাঠ খড় পুড়াতে হত ! 

ডি-ওয়ের ফ্লাই ওভার দা পিক : বাংলাদেশের অনেক অনেক মৌলিক এক্সপ্লোরের স্হপতি ' ডি-ওয়ে ' ফ্লাই ওভার দা পিক প্রযেক্ট হাতে নেয় ২০১১ তে । চকোরিয়া থেকে বান্দরবেনে ঢুকে মিরন্চা রেঞ্জ পার হয়ে লামা - আলি কদম হয়ে চিম্বুক রেঞ্জের সবচেয়ে উচু চুড়া ক্রিসতং সামিট করা ছিল প্রজেক্টের প্রথম ফেজ । কিন্তু প্রজেক্ট - এর মুল আকর্ষণ ছিল বান্দর বনের রেন্জ গুলো একে একে ক্রস করে একেবারে মায়ানমার সীমন্ত পর্যন্ত গিয়ে দেশের সবচেয়ে দুরূহ চুড়াটা সামিট করা । ক্রিসতং সামিটের পর তাই ডি-ওয়ে টিম পূব দিকে নেমে যায় সাংগু নদীর দিকে। সেখান থেকে ট্রেক করে এগিয়ে যায় দলিয়ানের দিকে ....

( আগামী পর্বে সমাপ্ত )

Thursday 30 April 2015

কেওক্রাডং থেকে "সাকাহাফং" বা "মদক তং" বেশী উচু : তার ৭ টি প্রমান ।


১। আর্মির স্হাপিত ফলক আর বিশ্বে স্বীকৃত ইউ এস ম্যাপ : 
 
কেওক্রাডং এর উপর স্হাপিত ফলকে দেখা যায় এটা ৩১৭২ ফুট উচু । 
 
ইউ এস ম্যাপে দেখা যায় মদক তং ৩৪৫৪ ফুট উচু। 

২। রাশিয়ান টপোগ্রফিক ম্যাপ : 
 
রাশিয়ান টপোগ্রফিক ম্যাপে কেওক্রডং ৮৮২ মিটার উচু, আর রাশিয়ান টপোগ্রফিক ম্যাপে মদক তং বা সাকাহাফং ১০৬২ মিটার উচু । 
 

৩। গুগুল ম্যাপ : 
 
গুগুল ম্যাপে কেওক্রাডং এর উচ্চতা ১০০০ মিটার থেকে অনেক কম। ৯৬০ থেকে ৯৮০ মিটারের মাঝে, অন্যদিকে ম্যাপে মদক তং বা সাকাহাফং এর উচ্চতা কমপক্ষে ১০৪০ মিটার । 
 

৫। অসংখ্য অভিযাত্রী দলের নেওয়া জিপিএস রিডিং: 
 
জিপিএস ডিভাইসে কেওক্রাডং এর রিডিং এসেছে ৩২৩০ ফুট । একই ডিভাইসে সাকার রিডিং এসেছে ৩৪১০ ফুট। 
 

৬। গুগুল আর্থ : 
 
গুগুল আর্থ এ কেওক্রাডং ৩১৬৬ ফুটের মত আর সাকাহাফং ৩৪১২ ফুট এর কাছাকাছি। 
 


এছাড়া নাসার এসআরটিএম(SRTM) ডেটায় দেখা যায় কেওক্রাডং সবচেয়ে উচু না মদক তং বা সাকা হাফং -ই সবচেয়ে উচু ।

Wednesday 22 April 2015

বাংলাদেশের সবচেয়ে বিপদজনক চুড়া 'যোগী' সামিট প্রমাণের ১০টি উপায়।(১ম পর্ব )


 
বাংলাদেশের এ পর্যন্ত অভিযান হয়েছে এমন পাহাড়গুলোর মাঝে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ঝুকিপূর্ণ চুড়া যোগী হাফং। মায়ানমার সীমান্তে অবস্হিত মদক রেঞ্জের আরো উচু উচু চুড়া আছে । দেশের সবচেয়ে উচু চুড়া মদক তং বা সাকাহাফং ও এই এলাকাতেই অবস্হিত । আর সবচেয়ে কঠিন ও কষ্ট সাধ্য জ- ত্লং ( ২য় সর্বোচ্চ) এর খুব কাছেই অবস্হিত । কিন্তু এই যোগী হা ফং বা যোগী পাহাড়টাই আরোহণের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক । ( উপরে ছবিতে যোগী/ কনদুক দেখা যাচ্ছে লোহ ঝিরি থেকে ) 

যোগী পাহাড়ে ২০১৪-১৫ তে বেশ কিছু অভিযান হয়েছে । চুড়া হিসেবে এর বিশেষ সুনাম থাকায় ট্রেকারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই যোগী । বাংলাদেশের তরুণ ও সম্ভবনাময়ী পর্বতারোহী সালেহীন আরশাদী বিষয়টি প্রায় ছয়টির মত চুড়া লোকেট করেছেন । অসুবিধা হচ্ছে যোগীতে অনেকগুলো সাব সামিট রয়েছে , যেগুলোতে গিয়ে অনেকেই বুঝতে পারেন না মুল সামিটে গিয়েছেন কিনা । আর গাইড বাবাজীরাও অনেককে গূগল - ভূগল বুঝিয়ে সামিটে না পৌছিয়েই সামিট দাবী করে বসে । 

১। মেইন সামিট থেকে কংদুক বা যোগীর ২য় ও ৩য় সামিট দেখা যাবে, অপেক্ষাকৃত নীচু ও স্পষ্ট । 
মেইন সামিট থেকে পাওয়া ভিউ। 
 
মেইন সামিট থেকে চিন্হিত সাব সামিটগুলো দেখা যায় । 

২। মেইন সামিটের ৫/৬ হাত দূরে ৪/৫ হাত নীচু একটা জায়গা দেখা যাব। কাছাকাছি এরকম একটা জায়গা যোগীর অন্য সামিটগুলোতে নেই । মহান অভিযাত্রী মুগ্ধ এখানেই দাড়িয়েছিল আর মাইনুল তার ছবি উঠিয়েছিল। 
বাংলাট্রেক থেকে পাওয়া মুগ্ধর ছবি 


 

৩। জ-ত্লং আয়ান ক্লা্যাং এর ওয়েষ্ট ফেস অর্ধেকটাই যোগী ম্যাসিফ দিয়ে ঢাকা পরবে । জ -ত্লং এর পশ্চিমের পুরা ঢাল দেখা যাবে না । ২৮০০-২৯০০ ফুটে পুরা ঢালটা সামনে থাকে । ৩১০০ ফুট সামিটে প্রায় পুরাটাই দেখা যায়, কিছুটা ঢাকা থাকে, মেইন সামিটে এমন নয় । 

 
ছবিটি ২৯০০ -৩০০০ ফুট উচু থেকে তোলা । আয়্যান এবং জ-ত্লং এর পশ্চিম পাশ পুরাটাই দেখা যাচ্ছে এখানে। 

 
উপরেরে ছবিতে দেখা যাচ্ছে জ-ত্লং এবংআয়্যান ক্ল্যাং অনেকটাই ঢাকা পরে গেছে যোগী ম্যাসিফের আড়ালে। 

৪। ৩০০ ডিগ্রী একটা খোলা ভিউ পাওয়া যাবে । প্রথম অভিযাত্রী দল ৩৬০ ডিগ্রী ভিউ পাওয়ার কথা জানায় , এখন একটা সাইডে প্রায় ৬০ ডিগ্রীর মত ঢেকে গেছে বাশ আর গাছে। এখান থেকে জ-ত্লং এর ছবি তুললে কোন বাশ/গাছ ফ্রেমে আসবে না । ৩১০০ ফুটের ২য় /৩য় সামিট থেকে ছবি তুললে বাশ/গাছ ফ্রেমে এসে পরবে । 

 
মেইন সামিটের আগে একটা সাব সামিট থেকে পাওয়া ভিউ ।বেশ কিছু বাশ দেখা যাচ্ছে । 

 
মেই সামিট থেকে পাওয়া ভিউ । ছবির ফ্রেমে জ্ত্লং একদম খোলামেলা । কোন ডাল পালা বাশ ঝাড় এসব আসেনি ছবির ফ্রেমে । 

৫। সামিট মাত্র দুই হাত একটা জায়গা ( লম্বা ও চওড়ায় ) পাশাপাশি দুই জন দাড়ালে গায়ে গায়ে লাগা লাগি হয়ে যাবে ! অন্য সামিট গুলো এরকম না ! 

৬। যোগী ম্যাসিফের ইষ্ট ফেস বেশ খানিকটা দেখা যাবে ! আর কোন সাব-সামিটে এটা সম্ভব নয় । 
 

৭। আয়ান ক্ল্যাং এর ও ইষ্ট ফেসের ঢালটা দেখা যাবে । ২৮০০ -৩০০০ ফুট পর্যন্ত আয়ানের শুধু নর্থ রিজটা দেখা যায় । ৩১০০ ফুটে গিয়ে নর্থ রিজ আর ইস্ট ফেস লাগালাগি ভাবে দেখা যায় । কিন্তু ৩২০০ ফুটের বেশী মেইন সামিটে গেলে নর্থের রিজ লাইনটা একদম বরাবর এসে যায় । 
 

৮। আয়ান ক্লাং ও কনদুক এর কানেকটিং রিজটার ইষ্ট ফেস দেখা যাবে । 


Saturday 18 April 2015

বাংলাদেশের সবচেয়ে বিপদজনক চুড়া 'যোগী' সামিট প্রমাণের ১০টি উপায় (পর্ব : ২ )


 
যোগী আরোহণের সময় ২৮০০-২৯০০ ফুট উচ্চতায় জ-ত্লং আর আয়্যান ক্ল্যাং দেখা যায় এরকম । দূরে ডানে চিম্বুক রেঞ্জের ক্রিসতং । সকাল বেলা পুরা সাংগু - রেমাক্রি অববাহিকা মেঘে ঢাকা ! মেঘের মাঝে উচু পাহাড়ের চুড়াগুলো মাথা বের করে আছে দ্বীপের মত। 
 
আয়্যান ক্ল্যাং বা হলুদ পাহাড় আর বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ জ-ত্লং আপনার ডান পাশে দেখা যাবে । আয়্যানের দক্ষিণ রিজ আর জ এর উত্তর রিজ যেখানে মিলে সেখান থেকে আয়্যানেরে উত্থান দেখা যাবে পিরামিডের মত । একই স্হান হতে 'জ-ত্লং' এর উত্থান দ্বিগুনেরও বেশী । আয়ানের পিরামিডের উচ্চতা ৪০% এর মত হবে জ -ত্লং এর তুলনায় ( একই স্হান থেকে জ-ত্লং এর পিরামিড মাপা হলে) 

 
যোগী আরোহণের সময় ২৯০০-৩০০০ ফুট উচ্চতায় জ-ত্লং আর আয়্যান ক্ল্যাং দেখা যায় এরকম । বেশ অনেকটা জুম করে তোলা হয়েছে ছবিটা , পোষ্টের প্রথম ছবিটা জুম করা হয়নি ) লক্ষ করবেন এই ভিউতে 'আয়ান ক্ল্যাং'এর পিরামিডের উচ্চতা ২৫-৩০% এর মত হবে 'জ -ত্লং' এর তুলনায় । ( একই স্হান থেকে জ-ত্লং এর পিরামিড মাপা হলে) 

 

এবার দেখুন যোগীর ২য় বা তৃতীয় সামিট থেকে কেমন দেখা যাবে : 
 

মুল সামিটের দক্ষিণে৩১২০ - ৩১৬০ ফুটের মত উচ্চতা বিশিষ্ট দুটি সামিট আছে উচ্চতার হিসেবে এরা যোগী ম্যাসিফের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় । এখান থেকে আয়ান ক্ল্যাং এর পিরামিড কে আরো ছোট দেখায় জ-ত্লং এর তুলনায় । উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে 'জ-ত্লং' এর ভিউ আশে পাশের সবকিছুকে ডমিনেট করছে, আর আয়ান ছোট হয়ে যাচ্ছে ! 


 


এবার দেখুন মূল সামিট থেকে কেমন ভিউ পাওয়া যাবে : 
 

সামিট থেকে দেখলে আয়ান -কে মনে হবে একদম মিশে গেছে । অল্প যতটুকু চোখে পরবে সেটা জ-ত্লং এর তুলনায় ১০% হতে পারে। মূল কথা দক্ষিন-পশ্চিম দিক থেকে আরোহণের সময় যত উচুতে উঠবেন আয়ান ছোট হতে থাকবে আর সে তুলনায় জ-ত্লং বড় হতে থাকবে। আসলে নিয়মটা এরকম-ই , যত উপরে উঠবেন বড় বড় পাহাড়গুলো আরো বিস্তৃত ও প্রশস্হ দেখায় । আর ছোট ছোটা পাহাড় ও অন্যান্য অবজেক্টগুলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে , কমপক্ষে ছোট থেকে ছোট হয়ে যায় !
 

Wednesday 15 April 2015

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া থেকে দেখা পাহাড়গুলো


 
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া মদক তং বা সাকাহাফং থেকে দক্ষিণে তাকালে মদল রেঞ্জের উচু চুড়াগুলি চোখে পরে। উপরে ছবিতে দেখা যাচ্ছে জ-ত্লং , যোগী/কংদুক , আয়্যান ক্লাং, সাদরা-তাওবা । 

সোজা পশ্চিমে সরকারী সর্বোচ্চ তাজিংডং এর তিন পিক : সাকা সামিট থেকে ১০০ ফুট নীচে তোলা ছবি। 

 
চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ চুড়া ক্রিস তং দেখা যায় দূরে । ( দক্ষিন -পশ্চিমে) 

 
দূরে উত্তর পশ্চিমে কেওক্রাডং ও কপিতাল । 

পশ্চিমে তাজিংডংএর পিছনে, একটু বামে চিম্বুক রেঞ্জের ২য় সর্বোচ্চ চুড়া থাইনকিয়াং। ( অনেকটা জুম করা হয়েছে তাই তাজিংডং ফ্রেমে আসেনি) 


দক্ষিণে একটু ডানে সাদরা, ইশ্বরমণি পাড়ার মাথার উপরের একটা চুড়া । 

 
সাকা বা মদকতং সামিটের ১০০ ফুট নীচ থেকে ১৮০ ডিগ্রী ভিউ ।

Tuesday 14 April 2015

বাংলাদেশের তৃতীয় সর্ব্বোচ্চ চুড়া : দুমলং


০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:১

 
দুমলং-এর ভাজে ভাজে মেঘের খেলা ! 

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া মদক তং বা সাকাহাফং অভিযানের পর দেশের এডভেঞ্চার প্রেমীদের চোখ পরে দুমলং এর উপর । রেংত্লাং রেঞ্জের সর্বোচ্চ চুড়াটি তখনও দুমলং নামে পরিচিত হয়নি । গুগুল আর্থ - এ এটাকেই দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চুড়া হিসেবে দেখাত । রেংত্লাং এর সর্বোচ্চ চুড়া হিসেবে একে রেংত্লাং নামেই ডাকা হতো । 
 
মেঘের আড়ালে দুমলং 

২০১২ সালে নেচার এডভেঞ্চার ক্লাবের রুবেল- হক প্রথম অভিযাত্রী দল হিসেবে এটা আরোহন করেন। তখন স্হানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় রেংত্লাং এর এই চুড়াটা স্হানীয়রা দুমলং নামেই ডাকে। দুমলং মুলত একটি ঝিরি বা ছোট পাহাড়ি নদী , যেটা পাহাড়ের গা বেয়ে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে রাইখান নদীটে মিশেছে । এই ধারাটির উৎস হিসেবে চুড়াটাকেও দুমলং বলা হয় । 

 
দুমলং এর তিনটি চুড়া , উত্তরের চুড়া, পশ্চিমের চুড়া আর আসল চুড়া। 

গুগুল আর্থ এর একটা সমস্যা আছে কোন কোন স্হানকে একটু বেশী উচু বা নীচু দেখানোর। মুলত সাটল রেডার ডেটার রিডিং প্রতিটি বিন্দুর উচ্চতা মেপে নেওয়া হয় না, বরং কয়েয়টি পয়েন্ট এর রিডিং নেওয়ার পাশাপাশি মধ্যবর্তী বিন্দুগুলোর জন্য এর একটা গড় নেওয়া হয় । আর বিভ্রাট ঘটে সেখানেই। পর্বতের সর্বোচ্চ বিন্দুর রিডিং না নিয়ে কাছাকাছি দুটি বিন্দুর গড় নিলে মুল উচ্চতা থেকে রিডিং কম দেখাবে। আবার গভীর খাতের কাছাকাছি দুটা পয়েন্ট এর গড় নিলে উচ্চতা বেশী দেখাবে ।এই কম বেশী দেখানোর -ও আবার একটা প্যাটার্ন আছে । কোন খাড়া পাহারের চুড়ার আশে পাশের পয়েন্ট গুলো বেশ নীচু হ, আর ফ্ল্যাট পাহাড়ের চুড়ার আশ পাশটা কম নীচু হয়। তাই খাড়া চুড়াগুলোতে গুগুল আর্থের ভুলের পরিমান বেশী আর ফ্ল্যাট চুড়াগুলোতে কম । 

চুড়া হিসেবে দুমলং অনেকটাই ফ্ল্যাট, ২য় সর্বোচ্চ চুড়া জ-ত্লং এর তুলনায়। কিন্তু জ -ত্লং এর খাড়া ঢাল এর কারণে গুগুল আর্থ - এ এর উচ্ছতা বেশ অনেকটাই কম দেখায়। আর সেই সুযোগে দুমলং হয়ে গেছে গুগুল আর্থ -এ দ্বিতীয় ! 

 
জি পিএস রিডিং - এ ৩৩১৫ ফুট পেয়েছিলাম । ( কেওক্রাডং ৩২৩০ ফুট পেয়েছিলাম) 

যাই হোন দ্বিতীয় মনে করেই এর খোজ খবর আর অভিযানের চেষ্টা চলতে থাকে । অবেশেষে জ_ত্লং কয়েকটা অভিযাত্রী দল মাপার পর-ই নিশ্চিত হওয়া যায় দুমলং ২য় না , বরং ৩য় । 

 
ট্রেকে প্রথম দেখা হয় দুমলং এর সাথে হারমন পাড়ার কাছাকাছি।